Monday, March 19, 2012

ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো ভারত

 বিরাট কোহলির বীরোচিত ব্যাটিংয়ে এশিয়া কাপের পঞ্চম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছে ভারত। এখন ফাইনালে উঠতে হলে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সামনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। এদিকে হেরেও প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে পৌঁছে গেছে পাকিস্তান।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ যদি জিততে পারে তবে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দলের পয়েন্টই সমান হবে। কিন্তু লিগ পর্বে ভারতকে হারানোয় ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। আর স্বাগতিকরা যদি বোনাস পয়েন্টসহ জেতে তবে সরাসরি চলে যাবে ফাইনালে।


৩ ম্যাচে দুই জয়ে ভারতের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। সমান খেলায় বোনাস পয়েন্টসহ পাকিস্তানের সংগ্রহ ৯ পয়েন্ট। দুই খেলায় বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে শ্রীলঙ্কা এখনো পয়েন্ট শূন্য।


মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ হাফিজ ও নাসির জামশেদের শতকের সুবাদে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৪৭ ওভার ৫ বলে ৪ উইকেটে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। এশিয়া কাপে এটিই সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়। এর আগে ২০০৮ সালে নিজেদের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ৩০৯ রান তাড়া করে জিতেছিলো পাকিস্তান।


লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান গৌতম গম্ভীর। দ্বিতীয় উইকেটে শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে কোহলির ১৩৩ রানের জুটি প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসে ভারতকে।


অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর সাঈদ আজমলের বলে ইউনুস খানের হাতে ধরা পড়েন টেন্ডুলকার (৫২)। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও একটি ছক্কা।


সুরেশ রায়নার বদলে চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন রোহিত শর্মা। কোহলির সঙ্গে তার ১৭২ রানের জুটি ভারতকে নিয়ে আসে চালকের আসনে। জয়ের ২৫ রান দূরে থেকে রোহিত বিদায় নিলেও অবিচল ছিলেন কোহলি। রোহিতের ৮৩ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও একটি ছক্কা।


দলীয় ৩১৮ রানে বিদায় নেয়ার আগে কোহলির ব্যাট থেকে আসে ক্যারিয়ার সেরা ১৮৩ রান। শেষ চার ম্যাচে তিন শতক পেলেন কোহলি। এটি তার একাদশ ওয়ানডে শতক। চলতি আসরে দ্বিতীয়। তার ১৪৮ বলের ইনিংসটি ২২টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো।


বাকি কাজটুকু সুরেশ রায়নাকে নিয়ে সহজেই সারেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।


৬৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে উমর গুল পাকিস্তানের সেরা বোলার।


এর আগে হাফিজ ও জামশেদের ২২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। এশিয়া কাপে এটি উদ্বোধনী জুটি তো বটেই যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রান।


তৃতীয় উইকেটে ২০০৪ সালে কলম্বোয় হংকংয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানেরই শোয়েব মালিক ও ইউনুস খানের ২২৩ রান এতোদিন ছিল যে কোনো জুটিতে সর্বোচ্চ। আর ২০০৮ সালে করাচিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া ও কুমার সাঙ্গাকারার ২০১ রান ছিল উদ্বোধনী জুটির সর্বোচ্চ।


হাফিজ ও জামশেদকে থামাতে ২৪ ওভারের মধ্যে ৮ বোলার ব্যবহার করেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অষ্টম বোলার হিসেবে বল করতে আসা শচীন টেন্ডুলকার নিজের দ্বিতীয় ওভারে (২৬ তম ওভার) প্রথম সুযোগ তৈরি করেন। সে সময় ৬৯ রানে ব্যাট করা জামশেদ তাকে ফিরতি ক্যাচ দেন। ঐ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি টেন্ডুলকার, উল্টো আঙ্গুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন।


প্রথম ওয়ানডে শতকে পৌঁছার পর সাজঘরের পথ ধরেন জামশেদ (১১২)। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ইরফান পাঠানের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। জামশেদের ১০৪ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও একটি ছক্কা।


নিজের চতুর্থ ওয়ানডে শতক পাওয়া হাফিজ (১০৫) এক রান পরেই জামশেদকে অনুসরণ করেন। হাফিজের ১১৩ বলের ইনিংসটি ৯টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো।


তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রানের ছোট কিন্তু কার্যকর জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেন উমর আকমল ও ইউনুস খান। প্রাভিন কুমারের বলে শর্টফাইন লেগে গৌতম গম্ভীরের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে আকমল করেন ২৮ রান।


এক সময়ে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ২৭৩/৩। সেখান থেকে সাড়ে তিনশ রানের স্বপ্ন দেখছিল দলটি। তবে ইউনুস (৫২) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছাতে না পারায় ততদূর যেতে পারেনি পাকিস্তান। ইউনুসের ৩৪ বলের ইনিংসে ৬টি চার।


ভারতের পক্ষে অশোক দিন্দা ও প্রাভিন কুমার দুটি করে উইকেট নেন।


সংক্ষিপ্ত স্কোর:


পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩২৯/৬ (হাফিজ ১০৫, জামশেদ ১১২, আকমল ২৮, ইউনুস ৫২, আফ্রিদি ৯, আজম ৪, মিসবাহ ৪*, গুল ০*; দিন্দা ২/৪৭, প্রাভিন ২/৭৭, অশ্বিন ১/৫৬, ইরফান ১/৬৯)


ভারত: ৪৭ ওভার ৫ বলে ৩৩০/৪ (গম্ভীর ০, টেন্ডুলকার ৫২, কোহলি ১৮৩, রোহিত ৬৮, রায়না ১২*, ধোনি ৪*; গুল ২/৬৫, হাফিজ ১/৪২, আজমল ১/৪৯)

No comments:

Post a Comment